চট্টগ্রাম, ৩ মে (অনলাইনবার্তা): একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ ও সেনাবাহিনীর বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১। বাকি একজনকে দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দু’জন হচ্ছেন রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান ও হাফিজ উদ্দিন। আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে আজহারুল ইসলামকে।
একই মামলার ওই পাঁচ আসামির মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন শামসুদ্দিন আহমেদ। বাকি চারজন পলাতক।
মঙ্গলবার (০৩ মে) সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ২৩তম এ রায় ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।
শামসুদ্দিন আহমেদকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণা সেজে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে পলাতক চারজনকে গ্রেফতারের পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আসামি পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, নির্যাতনের লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এতে ছিল ১৪ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, একজনকে আটক ও নির্যাতন এবং ২০–২৫টি বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।
অভিযোগগুলোর মধ্যে হত্যা–গণহত্যার তিনটি (১, ৩ ও ৪ নম্বর) ছিল পাঁচজনেরই বিরুদ্ধে। বাকি চারটির মধ্যে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের দু’টিতে (৬ ও ৭ নম্বর) গাজী আব্দুল মান্নান এবং হত্যার একটিতে (২ নম্বর) নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও হত্যার একটিতে (৫ নম্বর) শামসুদ্দিন আহমেদ এককভাবে অভিযুক্ত হন। এসব অভিযোগে ভিন্ন ভিন্নভাবে আসামিদের সাজা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। শুধু ৩ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন মান্নান।
সকাল পৌনে এগারটা থেকে বেলা ১২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত ৬২৮ প্যারাগ্রাফ সম্বলিত ৩৩০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে রায়ের প্রথম অংশ পাঠ করেন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী। দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারিক প্যানেলের অন্য সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। সবশেষে রায়ের মূল অংশ অর্থাৎ সাজা ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হক।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই সহোদর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার করিমগঞ্জ মধ্যপাড়া (দুলিপাড়া) গ্রামের মো. নাসিরউদ্দিন ও মো. শামসুদ্দিনের বাবার নাম মৃত আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি ও মায়ের নাম মৃত লুৎফুন্নাহার লতা। তারা রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত হন।
এ দু’জনের মধ্যে বড় ভাই নাসিরউদ্দিন সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই তিনি সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেন। ২০০২ সালের ১৩ জানুয়ারি তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। অন্যদিকে ছোট ভাই শামসুদ্দিন কিশোরগঞ্জে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
রায়ে বলা হয়েছে, গাজী আব্দুল মান্নান একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে করিমগঞ্জের স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হন রাজাকার–আলবদর বাহিনী গঠন করে স্বাধীনতাবিরোধীদের যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দেন। দুই ভাই শামসুদ্দিন–নাসিরউদ্দিন এবং হাফিজ ও আজহারুলসহ অন্যরা তার সঙ্গে যোগ দেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেরগুপ বিল, পীরাতন বিল ও আশেপাশের এলাকায় আসামিরা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন বলেও রায়ে প্রমাণিত হয়েছে।